জন্মদলিল

মেঘের নেশার ঘোর কেটে গেলে আরণ্যক আকাশে চাঁদ ওঠে। ঝাঁকড়া চুলে যেসব চিরহরিৎ বৃক্ষেরা গুম মেরেছিল তারা জোছনার ছোঁয়ায় ঘুম থেকে জেগে আলিঙ্গনে যেতে চায়; যারা ছিল বহু জনম ধরে ঢেউ তোলা শিলাস্তরী পাহাড়ে- যেখানে কোমল হৃদয়ের সুর বাজে শাখায় শাখায় বৃতি দলে- কখনো রঙ বদলায় ঋতুর চাপে। তারপর ঋতুমতী হলে জোনাকিরা ওড়াউড়ি করে জুড়ে দেয় বৈসাবির গান- বৃষ্টিতে ভিজে রোদে পোড়ে; তখনো বোধের গভীরে জুমপোড়া ছাই। গত জুমে ইঁদুরবন্যার ঘূর্ণিতে ছিলাম- আকাশে ওজোন ও মেঘের মলাট ছিল না- কেবল ঘনীভূত হলুদের আয়োজন আর অম্লান প্রশান্তির বদলে অম্ল ঝরে মেঘের চোখে- গা পোড়ে বনজুড়ে- বৃক্ষেরা নড়ে ওঠে- বদলানো ত্বকে ঝলসানো আদল

মদিরা জোছনায় অরণ্যপুত্ররা কথা বলে- বৃক্ষের সঙ্গে চাঁদের সঙ্গে লতার সঙ্গে ফুলের সঙ্গে; তারাও জানে না কথার প্রসঙ্গ- ছুঁয়ে থাকে বোবা ভাষায়, ভেতরের স্পন্দনের সুর যখন প্রিয়জনের হৃদ্যন্ত্রে মন্ত্র তোলে তখন আদিম আবাসে ফিরে যায় গুহারাত্রির খোঁজে...

আমাদের অরণ্যরাতের কথা বন্যবসতির কথা চেঙ্গী নদীর জল শুধু জানে আর জানে মাটিরাঙার কালো পাহাড় যেখানে জমা রেখেছি- ঘামদেহের নুন বীর্যপাত ঝরে পড়া অশ্রুকণা আর টোনাটুনির গল্প... পিঠা খাইলো মিঠা খাইলো

পূর্বজন্মে অরণ্যের উদ্ভিদ ছিলাম- শিলার শরীরে জন্ম- শিলায় ফোটাই প্রাণ- তাই শিলাতে খুঁজি বংশলতিকা সাকিন গোত্র আর জন্মদলিল

এ কথা আমাকে বিগত প্রহরের শেষে এসএমএস করে পাঠিয়েছে সহস্রবর্ষী চাঁদ তার প্রয়াণের আগে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন